ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ৪ নং সিংহেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত মোকামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টিতে ঝুকিপূর্ণ জরাজীর্ণ টিনশেডের ঘরে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই টিনশেড ঘরের চালার ফাঁকফোকর দিয়ে পানি এসে ভিজিয়ে দেয় শ্রেণিকক্ষের আসবাবসহ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের। হালকা ঝড় বাতাসেই দুলে ওঠে টিন শেডের ঘরগুলো। বলতে গেলে, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয় স্কুলটিতে। ১০ টি শ্রেনী কক্ষের জায়গায় ৫ টি কক্ষ দিয়ে চলে ক্লাস। তবে প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পরেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নতি হয়নি। নির্মাণ হয়নি কোন পাকা ভবন। নেই টয়লেটের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎসংযোগও কিছু আছে কিছু নেই। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কাজ সাড়েন পাশের বাড়ির টয়লেটে গিয়ে। অনেক দিন আগে নির্মিত টিনশেডের ঘরটিরও করুণ অবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ফুলপুর উপজেলার ৪ নং সিংহেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত মোকামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০০১ সালে স্থাপিত হয় এবং পাঠ দানের অনুমতি পায়।স্কুলটিতে বর্তমান ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩৫০ জন রয়েছে।স্কুলটি শুরু হয় তিনটি টিনের রুম দিয়ে পরে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরে আরো তিনটি টিন শেডের রুম তৈরি করা হয়। স্কুলটিতে ভালো পড়াশোনা ও পরীক্ষায় শতভাগ পাশের হারের পর ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে তখন স্কুল কতৃপক্ষ ও এলাকা বাসির সহযোগীতায় পশ্চিম দিকে ২ রুম নির্মান করে চলে স্কুলের পাঠদান। এর মধ্যে ২০১০ সালে স্কুলটি বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের অধিনে এমপিওভূক্ত করন করা হয়। এমপিওভূক্ত করনের পর থেকে স্কুলটিতে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা আরো দ্বিগুন বাড়ছে কিন্তু বিপত্তি বেধেছে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ সংকট ভাঙ্গা ও জরাজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ ঘরে ক্লাস করতে হয় কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের। টিনশেডের ঘরগুলো একবারেই ক্লাস করা অনুপযোগী বর্ষা মৌসুমে টিনের ফাকা দিয়ে পানি পড়ে ঝড়বৃষ্টি আসলে শ্রেনিকক্ষে পানি পড়ে ছাত্র ছাত্রীদের বই খাতা সহ জামা কাপড় ভিজে যায়। হলকা ঝড় বৃষ্টিতে টিনের চালা উড়ে যায় ।গরমের সময় টিনশেডে ঘর গুলোতে বিদুৎ ও ফ্যান না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম বিপাকে।টিনসেডের ঘরে কম্বলের ভেরা দিয়ে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। রুমগুলি টিনসেডের ভাঙ্গা হওয়ায় এক রুমের ক্লাস অন্য রুম থেকে দেখা যায়। কোন রুমে কি ক্লাস হচ্ছে সেটা বুঝাও যেন কষ্টসাধ্য।
স্কুলটির ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃতরিকুল ও তামান্না বলেন,আমাদের স্কুলে টিনের ভাঙ্গা ঘরে ক্লাস করতে হয়, ঠিকমত আমারা ক্লাস করতে পারি না। আজ বৃষ্টি হয়েছে সহপাঠিরা অনেকে ক্লাসে আসেনি ,কারন ঝড় বৃষ্টিহলে টিনের ঘরে পানি পড়ে। ঘর গুলোর ভেরা ভাঙ্গা টিন যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে এজন্য অনেকে ক্লাসে ঠিকমত আসে না। অন্য স্কুল / মাদ্রাসায় ভালো ভালো বিল্ডিং ও ক্লাস রুম থাকলেও আমাদের স্কুলে নেই। আমরা চাই আমাদের স্কুলেও ভালো ভালো ক্লসরুম তৈরি করা হউক তাহলে আমাদের ক্লাস করতে অসুবিধা হবে না।
স্কুলটির ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ মোস্তাকিম মিয়া ও শাকিল বলেন, আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এ স্কুলে পড়াশোনা করছি ৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে খুব কষ্টকরে পড়া লেখা করতে হয়েছে। কারন আমাদের স্কুলে ভালো একটি ক্লাস রুম নেই যা আছে তা ক্লাস করার খুবই অনুপযোগী। বৃষ্টির সময় সবচেয়ে বেশি ক্লাস করতে কষ্ট হয় ভাঙ্গা টিনের ফুটো দিয়ে ক্লাসরুমে পানি পড়ে বই খাতা ভিজে যায়। তখন ঠিকমত ক্লাস হয় না। আবার একটু বৃষ্টি হলে সহপাঠিরা ক্লাসে আসতে চায় না কারন বৃষ্টি হলে আমাদের বইখাতা ভিজে যায়। আমাদের একটায় দাবি আমাদের স্কুলে একটি ভালো বিল্ডিং যেন হয় তাহলে আমাদের পড়ালেখা করতে আর কষ্ট হবে না।
স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মোঃছায়েদুল ইসলাম বলেন,আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় ও স্কুলের ক্লাস পরিচালনা করে আসছি।স্কুলের ফলাফলো ভালো করে থাকি কিন্তু আমাদের স্কুলে একটা বিল্ডিং পাই না একটা ভালো পরিবেশ দিয়ে বাচ্চাদের ভালোভাবে লেখা পড়ার পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারি না। এসব ঝুকিপুর্ণ ঘরে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে ও ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের ঝুকি নিয়ে আমরা ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি ।
স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মোঃ হাছান আলী ও বদরুজ্জামান বলেন, আমরা বিগত ১৬-১৭ বছর ধরে এই ঝুকিপুর্ণ জরাজীর্ণ মাটি ও টিনশেডের ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসতেছি। ছাত্র-ছাত্রী বেশি হলে পরে টিনশেডের কয়েকটি ঘর তৈরি করি। আমাদের নিজের ও ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে ক্লাস করতে চায় না। কিন্তু ভালো ক্লাসরুম, বিল্ডিং না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে আমাদের।স্কুলটিতে নতুন ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন করতেছি।
মোকামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ স্কুলটি ২০০১ সালে স্থাপিত করা। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো স্কুলটি যখন স্থাপিত হয় তখন তিনটি টিনের রুম দিয়ে ক্লাস শুরু হয় ।পরে স্কুলটিতে লেখা পড়া সুন্দর হওয়ায় ও ছাত্র ছাত্রীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় এলাকাবাসির সহযোগীতায় দুইটি ভিট পাকা রুম তৈরি করা হয় ।শ্রেনি কক্ষের সংকট ও জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে ২০১৪ সালে বিল্ডিংএর জন্য আবেদন করা হয় এবং স্থানিয় চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মাধ্যমে মাননীয় গৃহায়ণ গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মহাদয়ের কাছেও আবদেন করা হয়। ২০১০ সালে এমপিও হয় স্কুলটি । এমপিও হওয়ার পরেও কয়েকবার বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বিল্ডিং এর জন্য আবেদন করা হয় । হবে হবে করে অজানা কারনে আবেদনের ৮ বছরেও বিল্ডিং বরাদ্দ পেলাম না । বিল্ডিং না থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের খুবই কষ্ট করে পড়া লেখা করতে হয় । কয়েকদিন আগে ঝরের কারনে টিনের ঘরটির উপরের চালের অর্ধেক অংশ বাতাসে উড়ে যায়।আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ধার করে রুমগুলির কাজ করাচ্ছি।আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের ভোগান্তির দিকে খেয়াল করে নতুন ভবন নির্মান করা হোক। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ ।
স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ৪ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহা আলী মুঠো ফোনে বলেন,স্কুলের ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে আমাদের চেষ্টা চলছে ভবন নির্মানের জন্য।