৯ ফেব্রুয়ারি অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবনখ্যাত উত্তরা গণভবনের সুবর্ণজয়ন্তী। করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটোর উত্তরা গণভবনের ৫০ বছর পূর্তিতে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করছেস্থানীয় প্রশাসন। তবে সুবর্ণজয়ন্তীতে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সচেতন নাগরিক সমাজ। তবে আগামীতে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে উত্তরা গণভবন হিসেবে নামকরণ করেন।
দিঘাপতিয়ার রাজপরিবার ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতে চলে যান। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীকে গভর্নর হাউজ হিসেবে ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্থানের গর্ভনর মোনায়েম খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী বাহিনী উত্তরা গণভবনকে উত্তরাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
আনুষ্ঠানিকভাবে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গণভবন’ হিসেবে নামকরণ করেন।
এর ঠিক একমাস পরে বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবনের মূল প্রাসাদের ভেতরে মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক করেন। সেই থেকেই ভবনটি প্রধানমন্ত্রীর ২য় বাসভবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রাসেল, সজিব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ স্বপরিবারে গণভবনে আসেন বঙ্গবন্ধু। এরপর কয়েক দফায় মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নীরব স্বাক্ষী হয়ে অবহেলিতই থেকে গেছে উত্তরা গণভবন। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে মন্ত্রীসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতি বিজড়িত দৃষ্টিনন্দন উত্তরা গণভবনে অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারো মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে উত্তরা গণভবন নামকরণের স্বার্থকতা ও গৌরব ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন নাটোরবাসী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণমাধ্যমকর্মী নবীউর রহমান পিপলু জানান, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে উত্তরা গণভবনে এসেছিলেন। তখন তিনি এখানে বিরল প্রজাতির হৈমন্তী বৃক্ষ রোপন করেন। সেই বৃক্ষের ফুল মার্চ মাসের দিকে এখনও সুবাস ছড়ায়।জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, আমরা বিভিন্নভাবে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রি পরিষদের বৈঠক করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রি পরিষদ বৈঠক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। আমরা দাবি জানিয়েছি কিন্তু এখনও এবিষয়ে কোন ইতিবাচক সাড়া বা সিদ্ধান্ত আসেনি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক ও নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, পূর্বে উত্তরাগণভনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতি বিজড়িত দৃষ্টিনন্দন উত্তরা গণভবনে অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারো মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হোক এমনটাই দাবি জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, করোনার কারণে সীমিত পরিসরে উত্তরা গণভবনের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত উত্তরা গণভবনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও যাতে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠক হয় এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।